প্রধানমন্ত্রী বনাম ইসলামবিদ্বেষী মহল

মাওলানা নাছরুল হক.
 প্রধানমন্ত্রী বনাম ইসলামবিদ্বেষী মহল
 প্রধানমন্ত্রী বনাম ইসলামবিদ্বেষী মহল

 আমি প্রথমেই বলে রাখি, চলমান কোনো রাজনীতির সাথে আমার সামান্যতম সম্পর্ক নেই। তবে সময়ের উপর বিবেচনা করে কিছু কথা লিখতে বাধ্য হলাম।
আমরা যারা একটু সচেতন তারা নিশ্চয় জানি যে, গত কিছুদিন ধরে রাশেদ খান মেননের দেয়া এক বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও পত্র-পত্রিকাসহ আরো নানানভাবে সমালোচনা ঝড় উঠেছে। আমিও তার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
তিনি কি বলেছে তা বলার প্রয়োজন মনে করছিনা।
কিন্তু তার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে একশ্রেণীর মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে নানান মন্তব্য করছেন। আমি এ নিয়ে কিছু বলতে চাই।


আমি যতদূর জানি মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে একজন ন্যায়নিষ্ঠাবান ধার্মিক নারী।  আর বাস্তবতাও তেমনটি বলে।
তার অনেক কাছের মানুষদের সাথে আমার সরাসরি কথা হয়েছে। আমি তার সম্পর্কে জানতে চাইলে তারাও তার ধার্মিকতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
বলতে গেলে তো অনেক হবে। তিনি সারাদেশে কয়েকশ মডেল মসজিদ ও মাদরাসা বানানোর প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। আবার পাঠ্যপুস্তক থেকে নাস্তিকবাদি অগণিত পদ্য, গদ্য সরিয়ে মুসলিম শিক্ষার্থীদের ঈমান মহামূল্যবান সম্পদকে রক্ষা করেছেন। আবার নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহিসালামকে নিয়ে কেউ কটুক্তি করলে তাকে আইনের আওতাধীনে শাস্তির ঘোষণা দেয়া। এসব কি একটুও ধার্মিকতার পরিচয় দেয় না?


আমরা জানি তিনি কিছুদিন আগে তার দলের বিভিন্ন মন্ত্রীদেরকে বরখাস্ত করে নতুনভাবে দলকে সাজানোর চেষ্টা করছেন। তিনি যাদেরকে বরখাস্ত করেন তাদের অধিকাংশই ছিলেন চরম ইসলামবিদ্বেষী। এটাও তার ধার্মিকতার প্রমাণ বহন করে।
 প্রধানমন্ত্রী বনাম ইসলামবিদ্বেষী মহল
সত্যি বলতে কি তিনি যতবারই ক্ষমতায় এসেছেন তাদেরকে বড় বড় পদ থেকে সরানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু যারা দেশ বিভাজনের পর থেকে দলে আছে হুট করে তাদেরকে বাদ দেয়া তো সহজ ব্যাপার নয়। আজ প্রধানমন্ত্রী সেই কঠিন কাজটাই করে দেখিয়েছেন। এতেও বুঝা যায় যে তিনি কতটা ইসলামপ্রিয় ও ধার্মিক ব্যক্তি। আমি তো মনে করি এসবগুলোই তিনি ধর্মের প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও পরম ভক্তি থাকার কারণেই করেছেন। মানুষ বলতে কিছু দুর্বলতা তো থাকবেই। একেবারে ধোয়া তুলশী পাতার মত কেউ হবে না। কিছু না কিছু ত্রুটি থাকবেই। আমরা যে কারো ভালো দিকগুলো আলোচনা করতে পারি। গ্রহন করতে পারি তার গুণগুলো। কিন্তু আমাদের অভ্যাস হলো উল্টো পথে চলা।
তাই কারো ভালো গুণ সহজে চোখে পড়ে না। আর পড়লেও তা কোনো গুরুত্ব রাখে না।

অনেকসময় দেশের স্বার্থে, দশের জন্য, জনগণের কল্যাণে দল গঠনের প্রয়োজন হয়ে থাকে। আর সেই ধারাবাহিকতায় আওয়ামীলীগ সরকার বিভিন্ন দলকে একত্রে করে জোট গঠন করেন। এসব দলের মূল নেতাদের মধ্যে ইসলামপ্রিয় ব্যক্তিরা যেমন আছেন। ঠিক তেমনি তাদের মধ্যে ইসলামবিদ্বেষী ব্যক্তিও থাকাটা স্বাভাবিক। যেমন আলোচিত মেনন তিনি কিন্তু ওয়ার্কস পার্টির নেতা। এ ছাড়া আরো যারা আছেন তারা নাস্তিক তা বলা মুশকিল। কারণ তারা যদি প্রকৃত নাস্তিক হতো তাহলে তো সব ধর্ম নিয়ে কথা বলতো। কেননা নাস্তিকদের কোনো ধর্ম নেই।  কিন্তু  তারা শুধু বারবার ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে বলেন। এবং তাদের টার্গেট শুধু ইসলাম।  এতে বুঝা যায় তারা ইসলামবিদ্বেষী এতে কোনো সন্দেহ নেই।

এখন তার ক্ষমতাসীন দলের কোনো একজন নেতা  বিচ্ছিন্নভাবে কোনো কথা বলার কারণে প্রধানমন্ত্রীকে দোষারোপ করা কি উচিত হবে? আমি কি নিজেও আরেকজনের দোষ নিজের কাঁধে নিতে রাজি হবো? তাহলে অন্যজনের কারণে একজন নির্দোষ মানুষকে যা তা বলা কতটা সমুচিত হবে? অথচ কথা বলার সময় ইনসাফের সাথে কথা বলতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো প্রধানমন্ত্রী নিজেও তার বক্তব্যকে সমর্থন করেননি। অধিকন্তু তিনি তার দলের নেতাদেরকে এ জাতীয় বক্তব্য দিতে বারবার নিষেধ করে আসছেন। এবং এখনো তাই করছেন।

তারপরও ধানের সাথে ছিটা বা পাতান থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে তা ধীরে ধীরে ঝেড়ে ফেলে দিতে হয়। ঠিক তেমনিভাবে আওয়ামীলীগ দলে যারা ইসলামবিদ্বেষী নামের ছিটা ছিল মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদেরকে প্রথম থেকেই ছাটাই করার চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। এতে অনেকাংশে সফল হয়েছেন। তিনি বাকি ছিটাগুলোকেও দলের থেকে বহিষ্কৃত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

এখানে অপ্রাসঙ্গিক হলেও একটা কথা বলতে চাই তা হলো, যখন কেউ এসব বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষাবলম্বন করে কথা বলে (বিশেষ করে কওমির ছাত্র-শিক্ষক) তখন তাদেরকে শাপলাচত্বর ট্রাজেডির কথা বলে গাদ্দার, প্রতারক ইত্যাদি বলে গালমন্দ করা হয়। এবং বলা হয় 'তোরা শোকরানা মাহফিল করে নাস্তিকদের সাথে হাত মিলিয়েছিস'।
 প্রধানমন্ত্রী বনাম ইসলামবিদ্বেষী মহল
শাপলাচত্বর ট্রাজেডি একটা হৃদয় বিদারক ঘটনা। তার জন্য সকলের মনে ব্যথা আছে। সেখানে ওলামায়ে কেরামের কিছুটা পদস্খলন ও একশ্রেণীর স্বার্থান্ধদের ষড়যন্ত্রের কারণে মাদরাসার নিরীহ ছাত্রসমাজ ও সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণ বর্বর হামলার শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু তার সাথে শোকরানা মাহফিলের তো কোনো সম্পর্ক নেই। দু'টা তো সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন বিষয়। তাই আমার মনে হয় দুই'টি বিষয়কে এক বানিয়ে উস্কানি ছড়ানো ঠিক হবে না। এবং এ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে হুমকি ধমকি ও অপপ্রচার করা থেকে আমরা সকলেই বিরত থাকার চেষ্টা করি। দেশটাকে আরো এগিয়ে নিতে একে অপরের সহযোগী হই। একটা সুন্দর দেশগঠনে ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।
"দাগে ভরা নিজের আঁচল আগে দেখো নাও,
পরের নামে বদনাম চিন্তা করে দাও।"

Nasrul Haqe

Post a Comment

0 Comments